গর্বিত বাংলাদেশ

গত ১০ বছরে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র জয়, শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মানবিক ভূমিকা পালন করায় বিশ্বের চোখে বাংলাদেশ এখন মানবতার উদাহরণ। আগামী ৫ বছরে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমুহের সাথে দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠন এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে উন্নত দেশগুলোতে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নিবে আওয়ামী লীগ।

সমূদ্র বিজয়: ব্লু-ইকোনমি- উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচন

সাফল্য ও পরিকল্পনা

বঙ্গোপসাগরে বহুমাত্রিক বিশাল সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় রেখে সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছরের মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস এ্যাক্ট-১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন।মিয়ানমার ও ভারতের সাথে অমীমাংসীত সমুদ্রসীমা ছিল সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। জননেত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের সুবর্ণ ফসল মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমূদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। এর ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপোসাগরে ২০০ নটিকেল মাইলের মধ্যে সমূদয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তার বাইরে মহাদেশীয় বেষ্টনি এবং একইভাবে ভারতের সঙ্গে ৩৫৪ নটিকেল মাইল পর্যন্ত মহাদেশীয় বেষ্টনীর মধ্যে সকল প্রকার সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সর্বমোট ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমূদ্র অঞ্চল লাভ করেছে, যা মূল ভুখন্ডের প্রায় ৮০.৫১ ভাগ।

সমূদ্র সম্পদ, যা ব্লু ইকোনমি নামে অভিহিত, বাংলাদেশের উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। সমূদ্র বন্দর, জাহাজ নির্মাণ, নৌ-চলাচল, সাগরে মৎস্য চাষ, জলজ উদ্ভিদ, তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ আহরণ, সমূদ্রে ভেসে ওঠা নতুন চর/দ্বীপ, সামুদ্রিক পর্যটন শিল্প ইত্যাদি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে ব্লু-ইকোনমি বা সমূদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আগামী মেয়াদে এই পরিকল্পনা অন্যতম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত করা হবে।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেয়া, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি রোধ করা, ঐতিহ্য ও স্মৃতি সংরক্ষণ করা, মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে আওয়ামী লীগ অঙ্গিকারাবদ্ধ।

লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

  • স্বাধীনতার স্বপ্ন ও মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, বিশেষত দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, বার্ধক্যকালীন ভরণ-পোষণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ গৃহীত অন্যান্য ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
  • দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহীদদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।

 

পররাষ্ট্র

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। জাতির পিতার আদর্শ ও সংবিধানের ২৫নং অনুচ্ছেদে বিধিবদ্ধ নীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’ -এর আলোকে সকল রাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করা হচ্ছে। বিএনপি-জামাত আমলের দুনীতিগ্রস্থ  ‘ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’, ‘ অকার্যকর রাষ্ট্র’ প্রভৃতি সব কলংক ঘুচিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় স্বার্থে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

  • আন্তর্জাতিক যে কোন বিরোধ শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
  • ভারতের সাথে তিস্তাসহ অভীন্ন নদীর পানি বন্টন এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ভারত-ভুটান-নেপালের সাথে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও অভীন্ন নদীর অববাহিকাভিত্তিক যৌথ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
  • বাংলাদেশ ভূখন্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কোন শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা হবে।
  • রাশিয়া, চীন এবং আশিয়ান দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক অরো জোরদার করা হবে।
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদার ও ব্যাপক বিস্তৃত করা হবে।
  • মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক এবং উন্নয়ন ও সহযোগিতা আরো জোরদার করা হবে। এই দেশগুলোর সাথে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন প্রভৃতি বিষয়ে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকা থাকবে। মুসলিম উম্মাহ্র সংহতি এবং ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) কাঠামোয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও সহযোগিতা আরো জোরদার করা হবে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করা হবে।
  • অষ্টেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার সঙ্গে অধিকতর যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

 

রোহিঙ্গা সংকট

  • মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করার কারণে ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। শরণার্থী বহন করার জন্য অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে গণহত্যা ও জাতিগত নিধন থেকে সর্বস্ব হারিয়ে প্রাণ নিয়ে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়  দেওয়া হয়েছে।
  • সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিশুদের পরিচর্যা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।
  • সরকারের তৎপরতার ফলে বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে এবং তাদের জন্য সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে।
  • রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্র ও জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে গঠনমূলকভাবে আলোচনার মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
  • রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে গত ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে নিরাপদ সন্মানজনক ও স্থায়ীভাবে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সাথে সফলভাবে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
  • রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সংশি¬ষ্ট সংস্থাসমূহকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করেছে।